জীবন ও কর্ম

শায়খ আহমাদ দীদাত

অমুসলিমদের কাছে ইসলামকে পৌছানোর কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আহমাদ দীদাত। পূর্ণ নাম : শাইখ আহমাদ হোসাইন দীদাত। জন্ম: ১লা জুলাই, ১৯১৮।

তাঁর জন্ম ভারতের গুজরাট প্রদেশের সুরাট জেলায়। দীদাতের পিতা ছিলেন একজন দর্জি। তাঁর বয়স যখন মাত্র ৯ তখন তিনি পিতার সাথে থাকার জন্য ভাগ্যের অন্বেষণে, দক্ষিণ আফ্রিকা যান। দীদাত দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার কয়েকমাস পরেই তাঁর মা ইন্তেকাল করেন। পড়াশুনার প্রবল আগ্রহ এবং মেধা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্রতা তাঁকে Standard Class-6 এর পরে আর প্রথাগত শিক্ষা নিতে দেয় নি।

জীবিকার জন্য মাত্র পনের বছর বয়সে একজন মুসলিম মালিকের ফার্ণিচারের দোকানে চাকুরি করা শুরু করেন। শেখ দীদাতের দোকানটি ছিল নাতাল দক্ষিণ আফ্রিকার একটি খ্রীস্টান মিশনারীর পাশেই। ট্রেইনি খীস্টান মিশনারীরা দীদাতের দোকানে প্রায়ই যেতো এবং বিভিন্নভাবে ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ সম্পর্কে কটাক্ষ করে মন্তব্য করতো। এদের অপপ্রচারকে মোকাবেলা করার জন্যই শেখ দীদাত তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব এবং ধর্ম গ্রন্থ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেন।

একদিন ফার্নিচারের দোকানের বেসমেন্ট বইপত্র খুঁজতে গিয়ে তিনি আল্লাহ রহমাতুল্লাহ কীরানবীর বিখ্যাত বই ইযহারুল হক ( সত্যের প্রকাশ ) এর সন্ধান পান যা তাকে প্রথম যুক্তি দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবেলা করার ধারণা দেয়। তার জীবনের প্রথম বাইবেলটি কিনেন এই সময়ই। শুরু হয় তাঁর পথ চলা।

১৯৪২ সালে দীদাত তাঁর প্রথম লেকচারটি দেন মাত্র পনেরজন দর্শকের সামনে ডারবান মুভি থিয়েটার ( আভালন সিনেমা হল ) হলে যার বিষয় ছিলো ” Muhammad (PBUH) : Messenger of Peace “। ১৯৫৭ সালে শেখ দীদাত তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তারি রাসূল এবং গোলাম হোসেন ভাংকরকে নিয়ে Islamic Propagation Centre ( IPCI) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে একজন মুসলিম দাতার অর্থ সাহায্যে As-Salaam Educational Instute নামের আরেকটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এখান থেকে শেখ আহমাদ দীদাতের লেখা ২০টি বইয়ের লক্ষ লক্ষ কপি সারা পৃথিবীতে বিনামূল্যে বিতরন করা হয়। তাঁর বইগুলো আরবী, উর্দু, বাংলা, মালয়, রাশিয়ান, চীনা, জাপানীজ ফ্রেঞ্চ, জুলু সহ আরো অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়। ইসলামের দাওয়াতের কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি ১৯৮৬ সালে বিখ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। তিনি সৌদিআরব, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করে বক্তৃতা প্রদান করেন এবং বিভিন্ন খ্রীষ্টান পন্ডিতদের সাথে সরাসরি দর্শকদের উপস্থিতিতে বিতর্কে অংশ নেন। ২০০৫ সালের ৮ই আগস্ট শেখ দীদাত তাঁর নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে ভেরুলাম গোরস্থানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, ডা. জাকির নায়েক আহমাদ দীদাতের ছাত্র।

আরও সংবাদ

মন্তব্য করুন

অনুগ্রহপূর্বক ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া‘র মন্তব্যের নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন। আপনার ই-মেইল ঠিকানা গোপন থাকবে। নামই-মেইল আবশ্যক।

Back to top button