জীবন ও কর্ম

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

আজ ৩০ মে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এই কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সেই থেকেই তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দিবসটিকে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছরই দিবসটি উপলক্ষে তাঁর মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, থাকে কয়েকদিন ব্যাপী কর্মসূচি। এবারও দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত সারাদেশে কর্মসূচি পালন করছে।

জিয়াউর রহমান তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবনের কারণেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তাসহ প্রভৃতি গুণাবলী এদেশের গণমানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে জিয়া পিতার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাবুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে অধিক খেতাব লাভ করে। সৈনিকজীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সকল সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যখন নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিএনপির দাবি জিয়াউর রহমানই তখন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহতের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যূত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল সারা জাতি। এমসয় সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াকে মুক্ত করা হয় এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন তিনি।

গভীর দেশপ্রেমের গুণাবলি দিয়ে জিয়াউর রহমান জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। দেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে ঐক্যের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। মাত্র ছয় বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে ৫৪ বছরের জিয়া বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার স্মরণকালের নামাজে জানাজায় প্রমাণিত তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।

কর্মসূচি
দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দুইদিন নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির পতাকা অধনমিত রেখে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করবে এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশও করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারাদেশে জেলা ও উপজেলা-থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুঃস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করবে।

আরও সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button