
গাজীপুরে প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও দেখে দেশের কোটি মানুষের মত আমারও গা শিউরে উঠেছে। জনসম্মুখে, দিনের আলোয়, হাতে চাপাতি নিয়ে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে—যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় হত্যাকারীরা ভয়হীন, দ্বিধাহীন এবং আত্মবিশ্বাসী। এ যেন রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে একটি বার্তা ছুড়ে দেওয়া—”আমরা আছি, দেখো আমাদের কিছুই হবে না।”
এই ঘটনা একটি সামান্য হত্যা নয়। এটি রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও আইনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন উঠছে—এই সমাজে খুনী বড়, না রাষ্ট্র বড়? এই প্রশ্নের উত্তর এখন শুধু রাষ্ট্রই দিতে পারে—কাজের মাধ্যমে, কথায় নয়।
তুহিন ছিলেন কার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত?
সাংবাদিক তুহিন—তিনি ছিলেন এক সাহসী কণ্ঠস্বর। হয়তো কারো কুকর্মের মুখোশ উন্মোচনে তাঁর লেখনী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হয়তো তিনি লিখেছিলেন এমন কিছু, যা দুর্বৃত্তদের জন্য অস্বস্তিকর ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি কলমের জবাব চাপাতি দিয়ে দেওয়া হবে? যদি একজন সাংবাদিকের বাকস্বাধীনতার মূল্য হয় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, তবে তা কেবল একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়—এটি গণমাধ্যম, গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকারকে হত্যা।
এই হত্যাকাণ্ডের দায় কার?
দায় শুধু খুনিদের নয়—দায় আমাদের নীরবতা, দায় রাষ্ট্রের শিথিলতা, দায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির। এই দেশে খুন হয়, ভিডিও হয়, মামলা হয়, আর বছর যায়। বিচার হয় না, শাস্তি হয় না, প্রভাবশালীরা চাপ দেয়। একসময় মানুষ সব ভুলে যায়।
এই দায় আমাদের সকলের—আমরা যারা সামাজিক মাধ্যমে দুই লাইন লিখে চুপ করে যাই;
আমরা যারা দলীয় পরিচয়ের কাঁচে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি না।
রাষ্ট্র যদি বড় হয়…
রাষ্ট্র বড় হতে হলে প্রমাণ করতে হবে—এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যতই অর্থ বা পরিচয়ে প্রভাবশালী হোক, তারা কেউই রেহাই পাবে না।
রাষ্ট্র যদি বড় হয়, তবে সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে দ্রুত, প্রকাশ্যে ও দৃষ্টান্তমূলকভাবে।
রাষ্ট্র যদি বড় হয়, তবে ভয় পাবেন খুনিরা—not সাংবাদিকরা।
রাষ্ট্র বড় কি না, তা প্রমাণ করতে হবে এখনই।
হত্যার বিচার না হলে, খুনি বড় হয়ে যাবে।
এই ঘটনা দলীয় নয়, মানবিক বিষয়
আমি বিশ্বাস করি যারা রাজনীতি করেন তা একটি মতাদর্শের বিশ্বাস রাখেন। কিন্তু কিছু বিষয় থাকে যেখানে দলীয় পরিচয় নয়, মানবতা বড় হয়ে ওঠে।
সাংবাদিক তুহিনের হত্যাকাণ্ড এমনই এক প্রসঙ্গ। এখানে কোনো দল নয়, কোনো মত নয়—এখানে একজন মানুষ, একজন কলমযোদ্ধা, একজন সত্যপ্রিয় নাগরিক নির্মমভাবে খুন হয়েছেন।
এই প্রশ্নের সামনে আমরা সবাই সমান—আজ তুহিন, কাল আমি, পরশু আপনি।
লিখনীতে সাংবাদিকও ভুল করতে পারে,তখনো মিথ্যাও লিখতে পারেন,তার জন্য উপযুক্ত প্রমানাদি নিয়ে আদালতের দ্বারস্ত হওয়ার সুযোগ আছে তবে কোনভাবেই হত্যাকান্ডের মত জঘন্য কাজ করা উচিত নয়।
আসুন এই নির্মম-অমানুষিক হত্যার বিচার চাই?
আমরা চাই দ্রুততম সময়ে সকল খুনির গ্রেফতার
আমরা চাই স্বাধীন তদন্ত কমিটি
আমরা চাই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার আইনগত কাঠামো
আমরা চাই বিচারহীনতার অবসান
এবং সর্বোপরি—
আমরা চাই রাষ্ট্র বড় হোক।
খুনিরা না।
শেষ কথা:
তুহিনের রক্তে যদি আমাদের বিবেক জাগে, তবে সেটিই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। নইলে এই সমাজে সত্য বলা বন্ধ হয়ে যাবে, এবং মিথ্যা আর চাপাতিরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে।
লেখক:
শাহাদাত হুসাইন
সম্পাদক,প্রবাস বার্তা।
মেইল:[email protected]