ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়

কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই এ কোরবানি। কোরবানির ঈদপালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর পশু কোরবানি করে থাকে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)। কোরবানি একটি প্রতীকী ব্যাপার। এখানে পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জানমাল থেকে শুরু করে সবকিছুই কোরবানি করতে প্রস্তুত। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কোরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে।
হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এবং মা হাজেরার আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলো আল্লাহতায়ালা হজের অংশ হিসেবে গণ্য করেছেন। আল্লাহতায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে দেখালেন, তিনি তার ছেলেকে জবেহ করছেন। (সুরা সাফ)।
কোরবানি ঈদ (ঈদুল আজহা) মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে জিলহজ মাসের ৩ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত কিছু নির্দিষ্ট আমল পালন করা সুন্নত।
নিচে ঈদের আগের সাত দিনের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম কাটা
জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত, যারা কোরবানি করবেন, তাদের জন্য সুন্নত হলো নখ, চুল ও অবাঞ্চিত লোম কাটা। এটি ইবাদতের প্রস্তুতি হিসেবে পালন করা হয়। তবে, কেউ যদি কোরবানি না করেন, তাদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক নয়।
২. কোরবানি পশু কেনার প্রস্তুতি
কোরবানি পশু কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:
পশু সুস্থ ও নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে।
পশুর কোনো ত্রুটি (যেমন অন্ধ, অসুস্থ) না থাকা উচিত।
পশু কেনার সময় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা শপথ বর্জন করা উচিত।
৩. কোরবানি করার নিয়ত ও উদ্দেশ্য
কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত। লোক দেখানো বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে কোরবানি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। নিয়ত অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হতে হবে।
৪. ঈদের নামাজের প্রস্তুতি
ঈদের নামাজের আগে কোনো পশু জবাই করা যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করে, সে যেন অন্য একটি কোরবানি করে।” অতএব, ঈদের নামাজের পরই কোরবানি করা উচিত।
৫. পশুর সেবা ও যত্ন
কোরবানি পশুকে সঠিকভাবে যত্ন ও সেবা করা উচিত। অহেতুক কষ্ট দেওয়া বা নির্যাতন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। পশুকে এমন স্থানে বাঁধা উচিত, যাতে পথচারীদের কষ্ট না হয়। পশুর গলায় ঘণ্টি বাঁধা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬. কোরবানি ভাগে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি
যদি কোরবানি ভাগে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে পশু কেনার আগে ভাগিদার নির্বাচন করা উচিত। এটি মোস্তাহাব আমল হিসেবে পালন করা হয়। যার ব্যাপারে নিশ্চিত জানা আছে, তার উপার্জন হারাম, তাকে কোরবানির শরিক করা উচিত নয়।
৭. ঈদের দিন দান-খয়রাতের প্রস্তুতি
কোরবানি মাংস তিন ভাগে বণ্টন করতে হয়: এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের জন্য, এবং এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়।
শায়েখ শাহাদাত আল মাহদী
ইমাম,মসজিদ হায়া আস-সুবয়ী।
রিয়াদ,সৌদি আরব।