‘মানবিক করিডর’ নিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উদ্বেগ প্রকাশ

প্রবাসের বার্তা অনলাইন ডেস্ক:
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইন রাজ্যে সাহায্য পাঠানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। এই করিডরটির মাধ্যমে বাংলাদেশের কক্সবাজার দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের সুবিধা রাখা হবে বলে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলগুলো। গত সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। একইসাথে এ বিষয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রতিক্রিয়া জানাবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বিএনপি সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠাবে এবং প্রয়োজন হলে অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, মিয়ানমারের সংঘাতময় রাজ্য রাখাইনে সাহায্য পাঠানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ে একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। তারা বলেন, এই ধরণের পদক্ষেপ বাংলাদেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক অখÐতার সাথে সম্পর্কিত। একারণে তাদের পরামর্শ হচ্ছে যে, এই ধরণের সংবেদনশীল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
সভা সূত্রে আরো জানা যায়, সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে কিংবা পুনর্বিবেচনা করতে যদি প্রয়োজন হয় বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবে। বিএনপি সরকারকে সতর্ক করেছে যে, সরকারের এই ধরণের পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মতো যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণকে অন্ধকারে রেখে এধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অযৌক্তিক। যদি এধরণের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই সবার সঙ্গে আলোচনা করে মতৈক্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করা উচিত ছিল।
এদিকে গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে মানবিক করিডরের বিষয়ে বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ সাহেব বলেছেন, আমরা আরাকানবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি মানবিক প্যাসেজ দিতে চাই। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটি বোঝা কঠিন। অস্থায়ী সরকারকে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। কারণ এটি দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, শান্তি এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এতে জড়িত।
বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক জাতিসংঘের অনুরোধে মিয়ানমারে মানবিক সাহায্য পৌঁছনোর জন্য ‘করিডর’ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে তার প্রতিবাদ জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম দাবি জানান, রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের আগে জাতীয় মতৈক্য অর্জনের।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নুর উল্লেখ করেন যে, মানবিক করিডরকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট বক্তব্য বিভ্রান্তির জাল তৈরি করেছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল একটি বিবৃতিতে বলেছেন, মানবিক করিডর অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা এবং জাতীয় মতৈক্য তৈরি অপরিহার্য, যেহেতু এটি জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার সাথে জড়িত। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।