গাজায় চলছে লোমহর্ষক গণহত্যা

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বের সরকারগুলো কিছুই করছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাইজেরিয়ার লেখিকা চিমামান্দা নগোজি আদিচি। বিশ্ববাসীর এমন অসাড়তায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, গাজায় সামষ্টিক শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এটা অমানবিক। একটি দেশের একটি সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের কারণে কেউ পুরো একটি জনগোষ্ঠীকে দায়ী করা যায় না। গাজায় হত্যাযজ্ঞ কি মাত্রায় পৌঁছেছে তা তার কথায় স্পষ্ট। প্রতিদিন সেখানে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে ‘যুদ্ধাপরাধী’ ইসরাইল ও এর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজায় আরও কমপক্ষে ৪৬ জনকে হত্যা করেছে। শনিবার দিবাগত রাতভর গাজা শহরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন এক পিতা ও তার কন্যা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ব জুড়ে আজ সোমবার সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করেছে প্যালেস্টাইনিয়ান ন্যাশনাল ও ইসলামিক ফোর্সেস। এক বিবৃতিতে গাজার ভয়াবহতাকে বিশ্ববাসীর কাছে জোর দিয়ে তুলে ধরার জন্য এই ধর্মঘট আহ্বানের কথা জানানো হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। দাবি জানানো হয়েছে গাজায় অপরাধের জন্য, ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘন করায় ইসরাইলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে।
পুরোপুরি একটি মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত করা হয়েছে রাফাকে। ইসরাইলি বাহিনী গাজার বাকি অংশকে এখন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গাজার নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লোমহর্ষক গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আবাসিক ভবনকে পর্যায়ক্রমিকভাবে এবং ব্যাপকভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরাইল। তারা এই শহরটিকে জনমানবহীন করে দিতে চায়। কয়েকদিনে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাফায় শতকরা কমপক্ষে ৯০ ভাগ বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। এর পরিমাণ কমপক্ষে ২০ হাজার ভবন। তাতে আছে কমপক্ষে ৫০ হাজার হাউজিং ইউনিট। ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে পানির ২৪টি কূপের মধ্যে ২২টি, শতকরা ৮৫ ভাগ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, আটটি স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১২টি মেডিকেল সেন্টার পুরোপুরি সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে গাজায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার একটি নতুন ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। ওদিকে ইসরাইলি বাহিনীর সুরক্ষায় রোববার সকালে আল আকসা মসজিদে প্রবেশ করেছে কয়েক ডজন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী।
সামনের দিনগুলোতে এটা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ, সামনেই ইহুদিদের ‘পাসওভার’ অনুষ্ঠান। তবে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের এই মসজিদে প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসরাইল। ওদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পোলিও টিকা প্রবেশ করতেও দিচ্ছে না ইসরাইল। এর ফলে গাজার ৬ লাখ দুই হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। জটিলভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়তে পারে। তাদেরকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন টিকা। ওদিকে বৃটিশ পার্লামেন্টের দু’জন এমপিকে ইসরাইলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এটাকে বিস্ময়কর বলে অভিহিত করেছেন তারা। ওই দুই বৃটিশ এমপি লেবার পার্টির আবতিসাম মোহামেদ এবং ইয়াং ইয়াং এক্সে যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বৃটিশ এমপিদেরকে দখলীকৃত পশ্চিমতীরে প্রবেশে বাধা দিয়েছে ইসরাইল। অপ্রত্যাশিত এমন আচরণে আমরা বিস্মিত। দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সরাসরি পরিস্থিতি দেখা পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক এমপি’র মধ্যে আমরা দু’জন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে পার্লামেন্টে কথা বলেছেন তারা। তারা বলেছেন, টার্গেটে পড়বো এই ভয়কে অতিক্রম করে হাউস অব কমন্সে আমাদেরকে অবাধে সত্য বলা উচিত। ওদিকে আজ সোমবার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গে কায়রোতে মিটিং করার কথা জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির আমন্ত্রণে হতে যাচ্ছে এই বৈঠক।